শুকিয়ে ঝরঝরে হয়ে গেছে

লিখেছেন লিখেছেন আমীর আজম ২১ জুলাই, ২০১৩, ০৪:১৩:১৩ বিকাল

ক্লাসে প্রথম যেদিন দেখেছিল সেদিনই

মেয়েটিকে ভাল লেগেছিল আসিফের। নাম

মিলি। খুব সুন্দর দেখতে। আর শান্তশিষ্ট।

ক্লাসে সবসময় চুপচাপ থাকে। প্রয়োজনের

বেশী একটা কথাও বলে না। তার

হাসিটা আরো বেশী সুন্দর। কথা বলার সময়

যখন মিষ্টি করে একটা হাসি দেয় আসিফের

বুকের ভিতরটা কেন জানি মোচড় দিয়ে উঠে।

অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের

মাঝে ছড়িয়ে পড়ল এই ঘটনা। সবাই

মিলে তাকে উৎসাহিত করতে লাগল।

- যেভাবেই হোক দোস্ত বলে দে তোর মনের

কথা। - তোর সাথে খুব ভাল মানাবে।

- বেশি দেরী করলে কিন্তু পস্তাতে হবে।

ইত্যাদি ইত্যাদি আরও অনেক কথা। কিন্তু

আসিফ কিছুতেই সাহস পায় না।

বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান আসিফ। খুবই

আদরের। ছোটবেলা থেকেই লাজুক প্রকৃতির।

লজ্জায় কোন কিছুই

ঠিকমতো বলতে পারে না। মুখ ফুটে বাবা মার

কাছে কোনদিন কিছু চায় নি।

বাজারে গেলে বাবা বলত - দেখত বাবা কোন

কাপড়টা তোর পছন্দ। সে বলত তোমার

যেটা ভাল মনে হয় নাও। বাড়িতে মা বলত -

বাবা আজকে তোর জন্য কি রান্না করব।

তার সরল উত্তর তোমার যেটা ভাল মনে হয়

কর।

এরকম একটা ছেলে কিভাবে বলবে তার

ভালবাসার কথা।

কিছুদিনের ভিতর বন্ধুরা টিটকারি মারা শুরু

করে দিল। "ব্যাটা তুই তো ছেলে না, মেয়েও

না, তুই হইলি একটা তৃতীয় সম্প্রদায়ের

লোক। "

নাহ। আর কাঁহাতক এই অত্যাচার সহ্য

করা যায়। কিছু একটা করতেই হবে।

মনে মনে ভাবে আসিফ।

আগামীকাল 14 ফেব্রুয়ারি। বিশ্ব

ভালবাসা দিবস। যা করার এই দিনেই

করতে হবে। এটাই সুবর্ণ সুযোগ।

রাতে বন্ধুদের সাথে অনেক প্লান

পরিকল্পনা করল কিভাবে কি করবে।

টেনশনে ভাল ঘুমাতে পারল না সে।

সারারাত ছটফট করে করে কেটেছে।

পরদিন সকালে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম

থেকে উঠল। তার মনে হল

রাতটা বুঝি অনেক ছোট ছিল। ফ্রেশ

হয়ে নাস্তা করে রওয়ানা দিল কলেজের

উদ্দেশ্যে।

রাস্তার পাশে ফুলের দোকান

থেকে একটা লাল টুকটুকে গোলাপ নিল

সে। মনে একটা অন্যরকম অনুভূতি।

আকাশটা মনে হচ্ছে আগের থেকে অনেক

বেশি নীল।

রোদে একটা মিষ্টি মিষ্টি ভাব।

বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে ফুলের সুগন্ধি।

সব মিলিয়ে আজকেই উপযুক্ত সময়

নিজের ভাললাগার কথা বলার।

মনে মনে ভাবে আসিফ।

কলেজে ঢুকতেই

দেখতে পেল মিলিকে। একটা গাছের

নিচে দাড়িয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে তার

জন্যই বুঝি অপেক্ষা করছে।

আসিফ এগিয়ে গেল তার দিকে। এক হাত

পিছনের দিকে। ধরে আছে গোলাপ টি।

পিছনে শুনতে পেল বন্ধুদের ডাকাডাকি।

সেদিকে আর ভ্রুক্ষেপ করল না। নিজের

আচরণে নিজেই অবাক হয়ে গেল।

কোথা থেকে আসল এত সাহস।

সে তো কোনদিনই এরকম ছিল না।

মিলির সামনে গিয়ে গোলাপ

ধরা হাতটা বাড়িয়ে দিল। কিছু বলার সুযোগই

পেল না। তার আগেই ঠাস একটা শব্দ।

আসিফ ভাবতে পারে নি মিলি তাকে চড়

দিয়ে বসবে। নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে।

তাকিয়ে আছে তার যাত্রাপথের দিকে।

আকাশ টা কাল হয়ে এল। এরাও কি তার

কষ্টের সাথে একাত্বতা ঘোষণা করতে চায়।

বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। ভিজে যাচ্ছে সে।

হুড়মুড়্ করে বিছানায় উঠে বসল সে। রুমমেট

পানি দিয়ে শরীর ভিজিয়ে দিয়েছে।

"কিরে মড়ার মত ঘুমাচ্ছিস। কখন

থেকে ডাকছি গায় লাগে না। ঘড়ি দেখ

কয়টা বাজে। কলেজ যাবি না।" ঝনঝন

করে উঠল রুমমেট। "আজকে কি করবি সেটাও

ভুলে গেছিস। "

বুঝতে পারল আসিফ এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিল।

যাক বাবা বাঁচা গেল। একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল

সে। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে পড়িমরি করে ছুটল

কলেজের দিকে।

কলেজে ঢুকতেই দেখতে পেল মিলিকে। গাছের

নিচে দাড়িয়ে আছে। মনে পড়ে গেল স্বপ্নের

কথা। সাথে সাথে লজ্জায় লাল হয়ে গেল সে।

বলতে পারল না তার ভালবাসার কথা।

অব্যক্তই থেকে গেল।

এখন কি করবে আসিফ?

সে কি পরবর্তী ভ্যালেন্টাইনস ডে পর্যন্ত

অপেক্ষা করবে?

না করবে না। কি এক রহস্যজনক

কারণে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর কোনদিনই

বলবে না সে।

সে মনে করে তার ভালবাসা পাওয়ার অধিকার

কেবলমাত্র তার স্ত্রীর। স্ত্রীর অধিকার

বঞ্চিত করে সে কিছুতেই পারে না আরেক

জনকে ভালবাসতে। তাই সে সিদ্ধান্ত

নিয়েছে যেদিন বিয়ে করবে সেদিন থেকে সমস্ত

ভালবাসা উজার করে তার স্ত্রীকেই দিবে।

ততদিন পর্যন্ত না হয় অব্যক্তই থেকে যাক

তার ভালবাসা।

ও হ্যাঁ। আর একটা কথা বলা হয় নাই।

মিলিকে দেয়ার জন্য আসিফ যে গোলাপ

টি কিনেছিল সেটা এখনো তার ব্যাগে আছে।

শুকিয়ে ঝরঝরে হয়ে গেছে।

বিষয়: বিবিধ

১৩২৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File